জাতীয়

জন্মের পর মেয়ের মুখ দেখা হলো না শাওরীনের

প্রচলন আছে নারীর জীবনে সবচেয়ে সুন্দর মুহূর্ত হলো, মাতৃত্বের স্বাদ পাওয়া। মা হওয়ার ঐশ্বরিক অনুভূতি নিতে একজন নারীকে বহু ধকল সামলাতে হয়। নাড়ী ছেঁড়া ধন, সন্তান দুনিয়ায় আসার পর নাকি নারীর সব কষ্ট কর্পূরের মতো উবে গিয়ে শান্তি হয়ে ফিরে আসে। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শাওরীন মোস্তফাও ছিলেন সন্তানসম্ভবা। গত বুধবার (৫ জুন) তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। দ্রুত নিয়ে যাওয়া হয় কক্সবাজারের চকরিয়ার একটি বেসরকারি হাসপাতালে। সেখানে চিকিৎসকেরা জানান, অ্যাডভোকেট শাওরীন মোস্তফা ব্রেইন স্ট্রোক করেছেন। তার উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন।

ওইদিনই তাকে আনা হয় চট্টগ্রামের আগ্রাবাদের মা ও শিশু হাসপাতালে। চিকিৎসকের পরামর্শে সেখানে তাকে সিজারিয়ান অপারেশন করা হয়। শাওরীনের ঘরে আসে ফুটফুটে কন্যাসন্তান। সন্তান জন্ম দিলেও সংজ্ঞাহীন অবস্থায় ছিলেন তিনি। নিজের মেয়েকে দেখার হুঁশ ছিল না। বৃহস্পতিবার (৬ জুন) শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে ও নবজাতককে আইসিইউতে ভর্তি করানো হয়। শুক্রবার (৭ জুন) সকাল ৯টা ৪০ মিনিটের দিকে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন তিনি। মেয়ের মুখ দেখার আগেই স্বজনদের কাঁদিয়ে পরপারে পাড়ি জমালেন শাওরীন।

তার মৃত্যুতে শোকের আবহ সৃষ্টি হয়েছে গোটা চট্টগ্রামের আদালত পাড়া থেকে চকরিয়া জনপদে। দু’বছর আগে বিয়ের পিঁড়িতে বসা শাওরীনের গ্রামে চলছে শোকের মাতম। অনেকে তার মৃত্যুতে শোক জানাচ্ছেন বিভিন্নভাবে।

শাওরীন কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলা মাইজ কাকারা এলাকার শিক্ষক বাদশা মিয়ার মেয়ে। তার মা মোতাহেরা বেগমও স্থানীয় উত্তর কাকারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। চার ছেলেসহ শাওরীন ছিলেন বাবা-মায়ের একমাত্র মেয়ে। তিনি চট্টগ্রামের প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ১৪তম ব্যাচের শিক্ষার্থী। তিনি সুপ্রিম কোর্ট ও চট্টগ্রাম বারের আইনজীবী ছিলেন।

আইনজীবী জান্নাতুল ফেরদৌস মুক্তা বলেন, ‘শাওরীন মোস্তফা আমার অত্যন্ত কাছের ছোটবোন। তার মৃত্যু মেনে নেওয়া খুব বেশি কষ্টের। নিজের মেয়েকে একবারের জন্য দেখতে পারল না, এর চেয়ে হৃদয়বিদারক আর কিছু হতে পারে না।’

কক্সবাজার জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য আসমাউল হোসনা বলেন, ‘প্রিয় বান্ধবী আমাদের সবাইকে ছেড়ে চলে গেছে। এটা বলতে আকাশসম কষ্ট হচ্ছে, সে কথা কী করে বোঝাব। কখনো ভাবিনি তার মৃত্যু সংবাদ এতো তাড়াতাড়ি দেখতে হবে কিংবা শুনতে হবে।’

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button