জাতীয়

রাজশাহীর পুঠিয়ায় প্রতারকের দখলে থাকা ২৫ বিঘা খাস জমিতে বসানো হলো ভূমি অফিসে পড়ে থাকা সরকারি সাইনবোর্ডটি

মোঃ তানজিলুল ইসলাম লাইক
রাজশাহী,

অগ্রযাত্রার ধারাবাহিক অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশের জেরেই নড়েচড়ে বসলো ভূমি অফিস, সাইনবোর্ডটি স্থাপন করলেও প্রশ্ন রইলো কর্মকর্তাদের ভূমিকা নিয়ে

রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার পাইকপাড়া ইউনিয়নে বছরের পর বছর দখলে থাকা প্রায় ২৫ বিঘা সরকারি খাস জমিতে অবশেষে উঠলো সরকারি সাইনবোর্ড।

দীর্ঘদিন ধোপাপাড়া মৌজার ওই জমি জবরদখল করে রেখেছিল প্রতারক শহিদুল ইসলাম ওরফে সাঈদুর রহমান। অথচ জেলা প্রশাসনের নির্দেশে প্রস্তুত হওয়া সাইনবোর্ডটি পড়ে ছিল ইউনিয়ন ভূমি অফিসে। অগ্রযাত্রার ধারাবাহিক অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশের পর ব্যাপক জনমতের চাপ তৈরি হলে শেষ পর্যন্ত নড়েচড়ে বসতে বাধ্য হয় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

স্থানীয়রা বলছেন, অগ্রযাত্রার প্রতিবেদন না হলে হয়তো এই সাইনবোর্ড আর কোনোদিনও লাগানো হতো না। কর্মকর্তারা দীর্ঘদিন সাঈদুরের ঘুষের টাকায় সরকারের সম্পদকে জিম্মি বানিয়ে রেখেছিলেন।

তাদের প্রশ্ন,সরকারি জমি উদ্ধারের দায়িত্বে যারা, তারাই যদি দখলদারের হয়ে দালালি করে, তবে জনগণ ন্যায়বিচার কোথায় পাবে?

তবে এখানেই থামেনি বিতর্ক। পাইকপাড়া ইউনিয়নের ভূমি সহকারী কর্মকর্তা সূফী এবরার আহমেদ প্রকাশ্যে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনুসকে নিয়ে কটূক্তি করেন এবং প্রতারক সাঈদুরের হয়ে সরাসরি দালালি করেন বলে অভিযোগ উঠেছে। অথচ এখনো পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে কোনো প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এতে স্থানীয়দের মধ্যে প্রশাসনের সদিচ্ছা নিয়েই নতুন করে সন্দেহ তৈরি হয়েছে।

অঞ্চলজুড়ে এখন প্রশ্ন জোরালো,শুধু সাইনবোর্ড বসানোই কি সরকারের দায়িত্ব শেষ? নাকি এবার সত্যিকারের অভিযান চালিয়ে প্রতারক সাঈদুরের কবল থেকে সরকারি ২৫ বিঘা জমি উদ্ধারে নামবে প্রশাসন?

সাবেক বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন রাজশাহী যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাফিন আক্তার বলেন, “অগ্রযাত্রার প্রতিবেদনে দেখলাম একজন ব্যক্তি সরকারি ১ নম্বর খাস খতিয়ানভুক্ত প্রায় ২৫ বিঘা জমি নিজের বাবার নামে নামকরণ করেছে। জেলা প্রশাসনের নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও সাইনবোর্ড অফিসে রেখে দেওয়া হয়েছে।

আরেকটি গুরুতর বিষয় হচ্ছে,প্রধান উপদেষ্টাকে নিয়ে ওই ভূমি কর্মকর্তা প্রকাশ্যে বিরূপ মন্তব্য করেছেন। এটা প্রশাসনের জন্য লজ্জাজনক। আমি চাই দ্রুত জমি উদ্ধারের পাশাপাশি ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হোক।

জিউপাড়া ইউনিয়ন বিএনপি নেতা জয়নাল আবেদীন বলেন, “অগ্রযাত্রার রিপোর্ট না হলে আমরা জানতেই পারতাম না সরকারি জমি কিভাবে হাতিয়ে খাচ্ছে প্রতারকরা। আমি চাই, তদন্তের মাধ্যমে এই জমি উদ্ধারের পাশাপাশি ওই অসাধু কর্মকর্তার বিরুদ্ধে চাকরি বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হোক।”

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পুঠিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এ কে এম নূর হোসেন নির্ঝর বলেন, “অগ্রযাত্রায় খবর প্রকাশের পর বিষয়টি আমার নজরে আসে।

আমরা সরেজমিন যাচাই করে দেখেছি ওই ব্যক্তি কোনো প্রমাণপত্র দেখাতে পারেননি। তাকে শোকজ করা হয়েছে। জমি উদ্ধারে সরকারিভাবে সব ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।”

প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে, প্রতারকের দখলদারিত্ব ভাঙতে এবার কি প্রশাসন বাস্তব পদক্ষেপ নেবে, নাকি সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দায় শেষ করবে

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button