জাতীয়

যাদের ডাকে সন্তানরা বাবা হারা হলো, খোঁজ নিচ্ছে না তারা কেউ: শহীদ নিশানের স্ত্রী

মাহফুজুর রহমান

জুলাই অভ্যুত্থানে সাভারে পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারান বাবা নিশান খান। বাবার জন্য দোয়া করার মানসে গেল শুক্রবার জীবনে প্রথমবার রোজা রেখেছে ৫ বছর বয়সী শিশু মোহাম্মদ। কিন্তু এই এতিম শিশুর মুখে দিতে ইফতারির অন্যতম অনুষঙ্গ খেঁজুর কিনে খাওয়ানোর সাধ্য নেই মা জামেনাতুজ জোহরা শান্তার। 

৬ মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী এবং ৪ বছর বয়সী শিশু মোহাম্মদকে রেখে নিশান খান অংশ নিয়েছিলেন জুলাই অভ্যুত্থানে। ৫ আগস্ট স্বৈরাচার হাসিনা পালানোর পর মেতে উঠেছিলেন উৎসবের আনন্দেও। কিন্তু সেই উৎসবেই পুলিশের গুলি কেড়ে নেয় নিশানের প্রাণ। তার মৃত্যুর তিনমাস পর কন্যা সন্তানের মা হয়েছেন স্ত্রী শান্তা। জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশন ও জামায়াতে ইসলামি থেকে কিছুটা সহযোগিতা পেলেও তা খরচ হয়ে গেছে তার চিকিৎসা ও বিভিন্ন ঋণ পরিশোধে। শান্তার সবচেয়ে বড় আক্ষেপ, স্বামী নিশানের মৃত্যুর পর তার সন্তানদের কোনো খোঁজ নেয় না স্বামীর পরিবার। খোঁজ নেয়নি জুলাই আন্দোলনের নেতারাও।

জামেনাতুজ জোহরা শান্তা জানান, মাওলানা মিজানুর রহমান আজহারীতে অনুপ্রাণিত হয়ে নিশান খান স্বপ্ন দেখেছিলেন ছেলে মোহাম্মদকে পড়াবেন মিশরের আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ে। কিন্তু নিশানের অকাল মৃত্যুর পর এখন ঠিকমতো খাবারও জুটছে না তাদের ভাগ্যে। ফলে আল-আজহারতো বহুদূর মোহাম্মদ প্রাথমিকের গণ্ডিই পার হতে পারবে কিনা সেই শঙ্কাও ঘিরে ধরেছে তাকে।

শহীদ নিশান খানের স্ত্রী জামেনাতুজ জোহরা শান্তা বাংলাভিশনকে বলেন, আমার স্বামী ৫ আগস্ট বিজয় মিছিলে গিয়ে পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারান। তিনি প্রতি বছর আমার বাসায় ৫-৬ কেজি খেজুর আনতেন। অথচ এবার আমার ছেলেটা প্রথম রোজা রেখেছে গত শুক্রবার। বাবার জন্য দোয়া করতে সে মসজিদে চলে যায়। আমি ছেলেটাকে যে খেঁজুর কিনে খাওয়াবো সেটাও আমি পারিনি। আমার স্বামী মারা যাওয়ার পর থেকে শ্বশুড় বাড়ির কেউ আমাদের খোঁজ নেয় না। আমাদের ফোনও ধরে না। আমি ছেলেটাকে কিভাবে পড়াশোনা করাবো সেটা নিয়ে চিন্তিত।

নিশানের স্ত্রী-সন্তানের এই কষ্ট জানে প্রতিবেশীরাও। তাই সবার চাওয়া সাময়িক সহযোগিতা নয়, পুনর্বাসন হোক পরিবারটির। নিশ্চিত হোক শিশু মোহাম্মদের শিক্ষাজীবন।

 

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button