
ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু-কাশ্মিরের পেহেলগামে সশস্ত্র হামলার জেরে উত্তপ্ত পাকিস্তান-ভারত সম্পর্ক। ভয়াবহ এ হামলায় পরোক্ষভাবে জড়িত থাকার অভিযোগে বুধবার ভারত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি সিদ্ধান্ত নেয়। এর জেরে বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) পাল্টা ব্যবস্থা নিয়েছে পাকিস্তান।
যার অংশ হিসেবে ভারতের সঙ্গে সিমলা চুক্তি বাতিল, ওয়াঘাহ সীমান্ত বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে ইসলামাবাদ। এগুলোর সঙ্গে নিজেদের আকাশে ভারতীয় মালিকানাধীন অথবা ভারত পরিচালিত সকল বিমান প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে পাকিস্তান। এর পাশাপাশি ভারতের সঙ্গে সব ধরনের বাণিজ্যও বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটি। তারা জানিয়েছে, পাকিস্তান হয়ে তৃতীয় কোনো দেশের পণ্যও ভারতে প্রবেশ অথবা বের হতে পারবে না।
এ ছাড়া সার্কের আওতাধীন বিশেষ ভিসা সুবিধাও বাতিল করেছে পাকিস্তান। যেসব ভারতীয়র কাছে এ ভিসা আছে তাদের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার নির্দেশও দিয়েছে ইসলামাবাদ।
এরসঙ্গে পাকিস্তানের ভারতীয় দূতাবাসে থাকা ভারতীয় সামরিক উপদেষ্টাদের অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে এবং ভারতীয় দূতাবাসের কর্মকর্তা ৩০ জনে নামিয়ে আনতে বলা হয়েছে। যা আগামী ৩০ এপ্রিল থেকে কার্যকর হবে।
বৃহস্পতিবার পাকিস্তানের জাতীয় নিরাপত্তা কমিশন প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফের নেতৃত্বে জরুরি বৈঠকে বসে। সেখানে এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ওই বৈঠকে ভারতের সিন্ধু নদের পানি চুক্তি বাতিলের নিন্দা জানানো হয়। দেশটি সতর্কতা দিয়ে জানায়, ভারত যদি সিন্ধু নদের পানি প্রবাহে বিঘ্ন ঘটানোর চেষ্টা করে, তাহলে এটি যুদ্ধ হিসেবে বিবেচনা করা হবে। এর জবাবও সেই হিসেবে দেওয়া হবে।
গত মঙ্গলবার ভারতের জম্মু-কাশ্মিরের পেহেলগামে সশস্ত্র গোষ্ঠীর হামলায় ২৬ জন নিহত হন। ভারত দাবি করেছে, এ হামলায় পাকিস্তানের একাধিক নাগরিক অংশ নিয়েছে। তবে পাকিস্তান হামলার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে।
ভারতশাসিত কাশ্মীরের পেহেলগামে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার পর কাশ্মীর ও ভারত-পাকিস্তান সীমান্তের ১০ কিলোমিটারের মধ্যে ভ্রমণ না করার পরামর্শ দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। পাশাপাশি ভ্রমণ নিরুৎসাহিত করা হয়েছে মণিপুর এবং মধ্য ও পূর্ব ভারতের বিভিন্ন অংশেও।
বুধবার (২৩ এপ্রিল) মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর ভারত ভ্রমণের বিষয়ে নতুন নির্দেশনা জারি করেছে বলে জানায় ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।
ভারতের যেকোনো জায়গা ভ্রমণে ন্যূনতম দ্বিতীয় মাত্রার সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে নির্দেশনায়। তবে দেশটির চারটি অঞ্চল ভ্রমণে সর্বোচ্চ চতুর্থ মাত্রার, অর্থাৎ ভ্রমণ না করার নির্দেশনা দিয়েছে মার্কিন কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি সহিংসতা এবং অপরাধের হুমকির কারণে মণিপুর ভ্রমণেও সর্বোচ্চ চতুর্থ মাত্রার সতর্কতা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
যুক্তরাষ্ট্রের সতর্কবার্তায় বলা হয়েছে, ভারতের কেন্দ্রশাসিত জম্মু ও কাশ্মীর অঞ্চলে সন্ত্রাসী হামলা এবং সহিংস বেসামরিক অস্থিরতা ঘটতে পারে। এই অঞ্চলটি ভ্রমণ করবেন না। তবে লাদাখ ও এর রাজধানী লেহ সফরের অনুমতি রয়েছে।
ভারত-পাকিস্তান সীমান্তের ১০ কিলোমিটারের মধ্যে সম্ভাব্য সশস্ত্র সংঘাতের ঝুঁকি থাকায় ওই অঞ্চল এড়িয়ে চলারও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
সতর্কবার্তায় আরও বলা হয়েছে, মাওবাদী চরমপন্থি গোষ্ঠী অথবা নকশালপন্থিরা ভারতের একটি বিশাল অঞ্চলে সক্রিয়। এরা স্থানীয় পুলিশ, আধাসামরিক বাহিনী এবং সরকারি কর্মকর্তাদের লক্ষ্য করে অনেক সন্ত্রাসী হামলা চালিয়েছে।
এদের হুমকির তীব্রতার কারণে মার্কিন কর্মকর্তাদের বিহার, ঝাড়খণ্ড, ছত্তিশগড়, পশ্চিমবঙ্গ, মেঘালয় এবং উড়িষ্যা রাজ্যের বেশিরভাগ অঞ্চলে ভ্রমণের আগে অনুমতি নিতে হবে। তবে তারা যদি কেবল এই রাজ্যগুলোর রাজধানী শহরে ভ্রমণ করেন তবে অনুমতির প্রয়োজন নেই। মার্কিন কর্মকর্তাদের জন্য মহারাষ্ট্রের পূর্বাঞ্চল এবং মধ্যপ্রদেশের পূর্বাঞ্চলে ভ্রমণেও অনুমোদনের প্রয়োজন হবে।
৭২ ঘণ্টার মধ্যে ভারত ছাড়ার নির্দেশ, সব ভিসা বাতিল পাকিস্তানিদের।
ভারত-নিয়ন্ত্রিত জম্মু ও কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জনের প্রাণহানির ঘটনার পর প্রতিবেশী পাকিস্তানের বিরুদ্ধে একের পর এক কড়া পদক্ষেপ নিচ্ছে নয়াদিল্লি। এবার ভারতীয় মেডিকেল ভিসাসহ পাকিস্তানি নাগরিকদের জন্য সব ধরনের ভিসা পরিষেবা স্থগিত করলো ভারত। বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) এক বিবৃতিতে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, এরইমধ্যে পাকিস্তানি নাগরিকদের জন্য জারি করা সব ধরনের বৈধ ভারতীয় ভিসা আগামী রবিবার থেকে বাতিল হয়ে যাবে।
বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, যেসব পাকিস্তানি নাগরিকের কাছে ভারতীয় ভিসা রয়েছে, তারা ভারত ত্যাগ করার জন্য ৭২ ঘণ্টার সময় পাবেন। ভিসা বাতিলের পাশাপাশি পাকিস্তানি নাগরিকদের জন্য সব ধরনের ভিসা পরিষেবাও স্থগিত করেছে ভারত। এর ফলে পাকিস্তানি নাগরিকরা ভারত ভ্রমণের জন্য কোনও ধরনের নথি পাবেন না।
এদিকে বুধবার (২৩ এপ্রিল) পাকিস্তানের বিরুদ্ধে পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয় ভারত। দেশটির পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রি জানান, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সিন্ধু পানি চুক্তি আপাতত স্থগিত করা হচ্ছে। এ ব্যবস্থা অনির্দিষ্টকাল পর্যন্ত বহাল থাকবে। এ সিদ্ধান্তের ফলে যে পরিমাণ পানি পাকিস্তানের পাওয়ার কথা, চুক্তি স্থগিত করায় আপাতত তা ব্যাহত হবে।
দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত হলো— আটারি-ওয়াঘা সীমান্ত বন্ধ করে দেওয়া। বুধবার থেকেই পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের এই গুরুত্বপূর্ণ স্থলসীমান্ত বন্ধ হয়ে গেছে। ওই সীমান্ত দিয়ে যারা ভারতে ঢুকেছেন, তাদের সবাইকে ১ মের মধ্যে ফিরে যেতে বলা হয়েছে।
তৃতীয় সিদ্ধান্ত হলো দিল্লিতে— পাকিস্তানের হাইকমিশনে নিযুক্ত সব সামরিক, নৌ ও বিমান উপদেষ্টাকে বহিষ্কার। তাদের অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে। একই সঙ্গে ইসলামাবাদে ভারতের হাই কমিশনে নিযুক্ত ভারতীয় সামরিক কর্মকর্তাদের ফিরিয়ে আনছে নয়াদিল্লি।
চতুর্থ সিদ্ধান্তে বলা হয়েছে, সীমান্তচৌকি বন্ধ ও দূতাবাসে কর্মীর সংখ্যা কমানোর পাশাপাশি পাকিস্তানিদের ভারতে আসাও সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। সে কারণে সব পাকিস্তানির জন্য সার্ক ভিসা বাতিল করার কথা জানানো হয়েছে। এই ভিসায় যারা ভারতে রয়েছেন, তাদের ফেরত যাওয়ার জন্য ৪৮ ঘণ্টা সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে।
পঞ্চম সিদ্ধান্তটি হলো, দুই দেশের হাইকমিশনগুলোতে কর্মরত লোকবল সংখ্যা ৫৫ থেকে কমিয়ে ৩০ করা হবে।