এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের ভাতা বাড়ানোর প্রস্তাব অর্থ মন্ত্রণালয়ে

বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে অবশেষে একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তাদের বাড়ি ভাড়া ২০ শতাংশ এবং চিকিৎসা ভাতা ৫০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে এক হাজার টাকা করার একটি প্রস্তাব অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এই উদ্যোগকে শিক্ষকরা তাদের আন্দোলনের প্রাথমিক বিজয় হিসেবে দেখছেন। এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণ প্রত্যাশী জোটের অধ্যক্ষ দেলাওয়ার হোসেন আজিজী জানান, মন্ত্রণালয় থেকে তাদের এই আশ্বাসই দেওয়া হয়েছিল। তিনি বলেন, ‘আমরা বাড়ি ভাড়ার ওপর গুরুত্ব দিয়েছি। সরকার যদি এই পদক্ষেপ নেয়, তাহলে আপাতত শিক্ষকরা আন্দোলনে যাবেন না’। তবে প্রস্তাবটি পাঠানো না হলে আলোচনার মাধ্যমে পরবর্তী কর্মসূচিতে যাওয়ার কথাও উল্লেখ করেন তিনি।
এর আগে, গত ১৩ আগস্ট জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে জাতীয়করণ, উৎসব ভাতা, চিকিৎসা ভাতা ও বাড়ি ভাড়া বৃদ্ধিসহ পাঁচ দফা দাবিতে সমাবেশ করেন শিক্ষকরা। সরকারের আশ্বাসের পর সেদিন তারা তাদের আন্দোলন স্থগিত ঘোষণা করেন। তবে দাবি মানা না হলে আগামী ১৪ সেপ্টেম্বর থেকে অর্ধদিবস ও পূর্ণদিবস কর্মবিরতি এবং ১২ অক্টোবর থেকে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছেন তারা।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. মজিবর রহমান প্রস্তাব পাঠানোর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা অর্থবিভাগে প্রস্তাব পাঠিয়েছি। অর্থবিভাগের অনুমোদনের জন্য কিছুটা সময় প্রয়োজন’। উল্লেখ্য, সারাদেশে প্রায় ৩০ হাজার এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সাড়ে পাঁচ লাখের বেশি শিক্ষক-কর্মচারী কর্মরত আছেন। এর সঙ্গে নতুন করে যুক্ত হচ্ছেন ১৮তম নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ আরও ৪১ হাজার শিক্ষক।
যদিও বাড়ি ভাড়া ও চিকিৎসা ভাতা বৃদ্ধিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে, শিক্ষকদের চূড়ান্ত লক্ষ্য শিক্ষাব্যবস্থা জাতীয়করণ। এ বিষয়ে বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি (বাশিস) এবং এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ লিয়াঁজো ফোরাম ২০২০ সালে সরকারের কাছে একটি প্রস্তাবনা দিয়েছিল। তাদের মতে, জাতীয়করণ হলে বঙ্গবন্ধুর অবৈতনিক শিক্ষার স্বপ্ন পূরণ, শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়ন এবং শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন বৈষম্য দূর হবে।
শিক্ষাব্যবস্থা জাতীয়করণের দাবিটি বহু বছরের পুরনো। এর আগে সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল ইসলাম নওফেল একবারে জাতীয়করণ সম্ভব নয় জানিয়ে পর্যায়ক্রমে তা বাস্তবায়নের কথা বলেছিলেন। তিনি শিক্ষকদের বাড়ি ভাড়া দুই ধাপে শতভাগ বাড়ানোর আশ্বাসও দিয়েছিলেন। সেই প্রতিশ্রুতির তুলনায় বর্তমান ২০ শতাংশ বৃদ্ধির প্রস্তাব একটি ছোট পদক্ষেপ হলেও, অর্থ মন্ত্রণালয়ের চূড়ান্ত অনুমোদনের দিকেই এখন তাকিয়ে আছেন লাখো শিক্ষক-কর্মচারী।